প্রারব্ধের ভোগ ভুগতেই হয়। তবে ভগবানের নাম করলে এই হয়--যেমন একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হ'ল।
"প্রারব্ধের ভোগ ভুগতেই হয়। তবে ভগবানের নাম করলে এই হয়--যেমন একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হ'ল।"
সারদা মা-র উক্তি—
“প্রারব্ধের ভোগ ভুগতেই হয়। তবে ভগবানের নাম করলে এই হয়--যেমন একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হ'ল।”
একটি গভীর আধ্যাত্মিক সত্য ও শক্তিশালী বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। এই বাণীর মধ্যে তিনি একাধারে ভাগ্যের অপরিহার্যতা এবং ঈশ্বরচিন্তার আশ্চর্য কার্যকারিতা বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রারব্ধ শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রারব্ধ’ থেকে এসেছে, যার অর্থ—পূর্বজন্ম বা পূর্বকর্মের ফলে নির্ধারিত বর্তমান জীবনের অভিজ্ঞতা বা ফলভোগ। সারদা মা বলেন, প্রারব্ধের ফল ভোগ করতেই হয়—অর্থাৎ কেউ তাঁর পূর্বকর্ম অনুযায়ী যা পাওয়ার যোগ্য, তা সে পাবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তিনি জানান, যদি কেউ ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে, পূজো করে, ভক্তিভরে জীবনযাপন করে, তবে সেই প্রারব্ধের তীব্রতা অনেকটাই লঘু হয়ে যায়।
তিনি একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন— "পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হল।" এটি নিছক এক উপমা নয়, এটি একটি জীবন্ত সত্য। যখন একজন মানুষ ভগবানের স্মরণে থাকে, তার আত্মিক শক্তি বেড়ে যায়, আর ভগবানের করুণাও তার দিকে প্রসারিত হয়। ফলে, যে দুঃখ তার ভাগ্যে ছিল, তা হয়ত পুরোপুরি বন্ধ হয় না, কিন্তু তার তীব্রতা অনেকটাই কমে যায়।
এই বাণী আমাদের শেখায় কিভাবে আধ্যাত্মিক জীবনধারা শুধু পরকাল নয়, এই পার্থিব জীবনেও আশ্চর্য রকমের শান্তি, সুরক্ষা ও সহনশীলতা এনে দিতে পারে। এটি কেবল কোনো ধর্মীয় আচার বা অন্ধ বিশ্বাসের শিক্ষা নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্বস্তি এবং ভক্তির ফলস্বরূপ এক বাস্তব জীবনের উপলব্ধি।
এখানে সারদা মা-র বক্তব্যে দুটি স্তর রয়েছে:
-
প্রারব্ধ অনিবার্য – যা আমাদের পূর্বকর্মের ফলে নির্ধারিত হয়েছে, তা এড়ানো যায় না।
-
ভগবান স্মরণে প্রারব্ধ লঘু হয় – ঈশ্বরের নাম, ভক্তি, সৎকর্ম ও সংযমিত জীবন সেই দুঃখের গভীরতা হ্রাস করতে পারে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল আধ্যাত্মিক শাস্ত্রানুগত চিন্তা নয়, বরং বাস্তব জীবনের সহনশীলতা, মানসিক ভারসাম্য এবং ধৈর্যের শিক্ষা। যারা ঈশ্বরচিন্তা করে, তারা বিপদের সময় ভেঙে পড়ে না; বরং অন্তরে এক আশ্রয় অনুভব করে। ঠিক যেমন একজন কাঁধে ঝড়ে পড়া মানুষের মাথার ওপরে কেউ ছাতা ধরে রাখে।
বর্তমান সমাজে যেখানে হতাশা, অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতা চারিদিকে, সেখানে সারদা মা-র এই শিক্ষা একটি মানসিক ও আত্মিক অবলম্বন। অনেকে প্রশ্ন করে—“ভগবানে বিশ্বাস করলেই কী হবে?” এই বাণী তার উত্তর দেয়—হ্যাঁ, সব কিছু হয়তো বদলে যাবে না, কিন্তু যা আসছে, তা অনেক সহনীয় হয়ে উঠবে। জীবনের ঝড়টা পুরো বন্ধ না হলেও, সে ঝড়ে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।
এই বাণী এমনকি মনোবিজ্ঞান বা জীবনদর্শনের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ এটি আমাদের আত্মতৃপ্তি, ইতিবাচকতা ও মনের স্থিতি রক্ষা করতে সাহায্য করে।
-
সারদা মা-র প্রারব্ধ উক্তি
-
প্রারব্ধ, ভগবান ও ভক্তি
-
ভাগ্যের প্রভাব ও ঈশ্বরের নাম
-
আধ্যাত্মিক বাংলা প্রবন্ধ
-
ভগবানের করুণা ও দুঃখ লাঘব
-
সারদা মা বাণী বিশ্লেষণ
-
মানসিক শান্তির উপায়
-
ধর্মীয় জীবন ও প্রারব্ধ
-
হিন্দু দর্শনে প্রারব্ধের ভূমিকা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন