মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়


 "মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়" 

সারদা মা ছিলেন এক মহান আধ্যাত্মিক শক্তির আধার, যাঁর প্রতিটি বাক্য সাধারণ জীবনের জটিল সমস্যার সরল সমাধান দিতে সক্ষম। তাঁর উক্তি “মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।” শুধুমাত্র ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক নয়, বরং বাস্তব জীবনেও এক মূল্যবান দিশা দেখায়। এখানে 'মনটাকে বসিয়ে' বলতে বোঝানো হয়েছে মনকে স্থির রাখা, নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর 'আলগা না দিয়ে' মানে মনকে অস্থির, ভাসমান বা দিশাহীন না হতে দেওয়া। সারদা মা জানতেন, মানুষের সমস্ত কাজ, ভাবনা ও সিদ্ধান্তের মূলে থাকে মন। তাই যদি মন নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তাহলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গোলযোগ আসা অবধারিত। তিনি আমাদের শেখান, স্থির মন নিয়েই কাজ করলে জীবনে সফলতা নিশ্চিত হয়।

আধুনিক যুগে আমরা প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ, বিভ্রান্তি ও অসংখ্য তথ্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মন ক্রমাগত আলগা হতে থাকে। ফলে মনোযোগ হারায়, কাজের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে এবং আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে। সারদা মা-র এই উক্তি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি কাজে মন বসিয়ে রাখা কতটা জরুরি। আলগা মন শুধু কাজ নষ্ট করে না, বরং সম্পর্ক, ভবিষ্যৎ এবং মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত করে। একটি স্থির মন যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, তেমনই আমাদের অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। এই মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষ তার অন্তরের শক্তিকে জাগ্রত করতে পারে।

শিক্ষার্থী হোক বা কর্মজীবী, গৃহিণী হোক বা সন্ন্যাসী—সবাই যদি এই শিক্ষাটি আত্মস্থ করে, তাহলে তাদের জীবন অনেক সহজ ও সুন্দর হতে পারে। মন বসিয়ে কাজ করলে তাড়াহুড়ো হয় না, ভুল হয় না এবং আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে পারি। এটি ধ্যানের মতই এক প্রকার মনঃসংযম, যা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের চর্চার মধ্য দিয়ে আসে। সারদা মা-র মতে, মন যদি চঞ্চল হয় তবে মানুষ কখনো স্থায়ী শান্তি পায় না। তাই মনকে বসিয়ে কাজ করতে পারা এক অভ্যাস, যা ধীরে ধীরে রপ্ত করতে হয়। প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে যদি আমরা নিজের মনকে স্থির রাখার চেষ্টা করি, তবে তা আমাদের জীবনের গতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আমূল বদলে দিতে পারে।

এই উক্তি শুধু আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য নয়, বরং আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ, এই ব্যস্ত পৃথিবীতে স্থিরতা হারিয়ে ফেলা খুব সহজ। কাজের চাপে, পারিবারিক দায়িত্বে, কিংবা প্রযুক্তির আসক্তিতে আমাদের মন প্রায়ই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এই সময়েই সারদা মা-র বাণী আমাদের ফিরিয়ে আনতে পারে অন্তরের কেন্দ্রে। মন যখন স্থির হয়, তখন জীবনের গোল বাধাগুলোও অনেক সহজে মিটে যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে স্থির মন ও একাগ্রতা। তাই সারদা মা আমাদের শেখান, মনকে বসিয়ে রেখে, তার উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। নতুবা ছোট ছোট ভুল থেকেই বড় গোলযোগের সৃষ্টি হয়।

এই উক্তির মধ্যে জীবনের গভীর মনস্তাত্ত্বিক সত্য লুকিয়ে আছে। এটি মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সমর্থিত, যেখানে বলা হয়েছে, মনোযোগী মন কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমায়। আজকের দিনে যখন সবাই স্ট্রেস, ডিপ্রেশন এবং অস্থিরতায় ভোগে, তখন এই সরল বাণী হতে পারে শান্তির এক উপায়। এমনকি আত্মউন্নয়নমূলক বই ও কোচিং সেশনেও আজ যে কথাগুলো বলা হয়, সারদা মা সেই বাণী বহু আগেই নিখুঁত ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

মন যদি ছুটে বেড়ায়, তাহলে তা ঠিক যেন এক অশ্বচালকের নিয়ন্ত্রণহীন ঘোড়ার মত। কিন্তু যদি মনকে লাগাম দিয়ে বসিয়ে রাখা যায়, তাহলে তা জীবনের রথকে সঠিক পথে টেনে নিয়ে যেতে পারে। সারদা মা আমাদের সেই চালক হতে বলেন, যে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানে। তাই এই উক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দিকনির্দেশনা দেয়। চাকরি, পড়াশোনা, ব্যবসা, সম্পর্ক, আধ্যাত্মিক সাধনা—সব জায়গায় এই নীতিটি কার্যকর।

সংক্ষেপে বললে, সারদা মা-র এই চিরন্তন বাণী আমাদের শেখায় ধৈর্য, নিয়ন্ত্রণ, মনোযোগ ও আত্মশক্তির ব্যবহার। এই শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজ জীবনে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন এই বাণীর আলোকে নিজেকে পর্যালোচনা করা। সারদা মা-র বাণী শুধু শোনার জন্য নয়, জীবনে কাজে লাগানোর জন্য। মনকে বসাতে পারলেই আসবে সাফল্য, শান্তি ও আত্মতৃপ্তি। আলগা মন যেমন গোল বাঁধায়, তেমনি স্থির মন তৈরি করে নতুন সম্ভাবনার দরজা। এই একটি বাক্যেই সারদা মা বুঝিয়ে দিয়েছেন জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলোর একটি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Ordinary human love results in misery. Love for God brings blessedness

"যদি শান্তি চাও, মা, কারো দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার ক'রে নিতে শেখ, কেউ পর নয়, মা; জগৎ তোমার।"

"আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী"