দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে
"দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।"
সারদা মা-র প্রতিটি বাক্য তাঁর অনন্য অন্তর্দৃষ্টি ও মানবিক উপলব্ধির প্রতিফলন। তাঁর উক্তি
"দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।"
শুধু আধ্যাত্মিক শিক্ষা নয়, এটি এক বিশ্বজনীন মানবতাবাদী ঘোষণা।
এই বাণীর প্রথম অংশে — "দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ?" — তিনি মানবতার মূলে থাকা দয়ার গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। মানুষের শরীরে, মননে, আচরণে যদি দয়া না থাকে, তাহলে সে কেবল বাহ্যিকভাবে মানুষ হলেও প্রকৃত অর্থে পশুর মতোই নিষ্ঠুর, বিবেকহীন ও সংবেদনহীন হয়ে পড়ে।
সারদা মা এখানেই থেমে যাননি। তিনি বলেন, "আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।" এই অংশে তাঁর মাতৃসত্তার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে। তিনি এতটাই গভীর দয়া অনুভব করতেন যে নিজের সত্ত্বাকেও ভুলে যেতেন। এ যেন এক পরম মমতাময়ী মায়ের হৃদয়ের সশ্রদ্ধ উন্মোচন।
এই বাণীর মাধ্যমে সারদা মা আমাদের শেখান, দয়া শুধু একটি গুণ নয় — এটি একজন মানুষের সত্য পরিচয়। দয়া মানে কেবল সহানুভূতি নয়; এটি সহমর্মিতা, আত্মত্যাগ এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ। একজন মানুষের মধ্যে দয়া থাকলেই সে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে।
আজকের পৃথিবীতে যেখানে হিংসা, বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতা মানুষকে বিবেকহীন করে তুলেছে, সেখানে সারদা মা-র এই উক্তি যেন এক জাগরণের ধ্বনি। মানুষ অনেক কিছু শিখছে—প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ভাষা—কিন্তু দয়া হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দয়া ছাড়া মানবসভ্যতা টিকতে পারে না।
সারদা মা আমাদের শিখিয়েছেন, কেবল নিজের পরিবার বা জাতির প্রতি নয়, সকল জীবের প্রতিই দয়া থাকা উচিত। এমনকি শত্রুকেও সহানুভূতির চোখে দেখতে হবে। তিনি নিজে সেই পথেই চলেছেন—ভিক্ষুক, অসুস্থ, পথভ্রষ্ট—সবাইকে তিনি সমান ভালবাসা ও স্নেহে জড়িয়ে নিয়েছেন।
এই শিক্ষা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি চিরকালীন মানবিক আদর্শ। 'আমি কে'—এই অহংকার ভুলে গিয়ে যদি আমরা অন্যের দুঃখ অনুভব করতে পারি, তাহলেই আমাদের জীবন সার্থক হয়। সারদা মা নিজে সেই আত্মভোলা মাতৃমূর্তি, যাঁর হৃদয় ছিল এক সর্বজনীন আশ্রয়স্থল।
এই বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অহংকার, বৈষম্য, ঘৃণা বা শত্রুতা নয়, দয়া-ভিত্তিক সম্পর্কই সবচেয়ে দৃঢ়, সবচেয়ে শুদ্ধ। তাই নিজের জীবনে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করা উচিত—"আমার মধ্যে কি যথেষ্ট দয়া আছে?" যদি না থাকে, তবে আমাদের মানবজীবনের মূল উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে যাবে।
এই বাণী শিক্ষকদের শেখায় কিভাবে ছাত্রকে ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলতে হয়, ডাক্তারদের শেখায় রোগীকে মানবিক চোখে দেখতে, আর নেতা-নেত্রীদের শেখায় কিভাবে ক্ষমতার চেয়ে মানবিকতা বড়। এমনকি সমাজের প্রতিটি সম্পর্কেও এই দয়ার প্রয়োগ জরুরি—বন্ধুত্ব, বিবাহ, সহকর্মিতা সবই টিকে থাকে দয়ার উপর ভিত্তি করেই।
-
সারদা মা-র দয়া বিষয়ক উক্তি
-
মানবিকতা ও সহানুভূতি
-
দয়া ছাড়া মানুষ পশু
-
সারদা মা-র শিক্ষা বাংলা
-
বাংলা আধ্যাত্মিক প্রবন্ধ
-
সহমর্মিতা ও আত্মত্যাগ
-
মাতৃত্ব ও মানবতা
-
সারদা মা দয়া বিশ্লেষণ
-
মানব জীবনে দয়ার প্রয়োজনীয়তা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন