ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক’জনে? নিন্দা-ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কী করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে ক’জনে


 


"ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক’জনে? নিন্দা-ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কী করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে ক’জনে?" 

সারদা মা-র বাণী আমাদের জীবনের গভীর বাস্তবতা স্পষ্ট করে তোলে। তিনি বলেন, "ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক’জনে? নিন্দা-ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কী করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে ক’জনে?" — এই একটিমাত্র বাক্যের মধ্যে মানুষের আচরণ, সমাজের মনোভাব এবং প্রকৃত সহানুভূতির অভাবকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি শুধুই আধ্যাত্মিক উপদেশ নয়, বরং এক বাস্তব জীবন দর্শন। সারদা মা আমাদের শেখাতে চেয়েছেন, মানুষকে শুধুমাত্র দোষ ধরলেই চলে না, বরং তাকে গড়ে তোলার পথ দেখানোই প্রকৃত মানবতা।

আমরা দেখি, অনেকেই অন্যের ভুল, ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা করে, হাসিঠাট্টা করে, অপমান করে। কিন্তু খুব কম মানুষই এগিয়ে আসে সেই ব্যর্থ মানুষটিকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে, তাকে গড়ে তুলতে, তাকে সাহায্য করতে। এই ভাঙা আর গড়ার ব্যবধানটাই আমাদের সমাজের অন্যতম বড় দুর্বলতা। ভাঙা মানে সমালোচনা, আঘাত, ধ্বংস করা। গড়া মানে সহানুভূতি, সাহস জোগানো, ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে উন্নতির পথে ঠেলে দেওয়া।

সারদা মা আমাদের মনে করিয়ে দেন, প্রকৃত শক্তি হল গড়ার মধ্যে। একজন মানুষ যখন ভুল করে, তখন তাকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ সময়, সমাজের চোখে সে শুধু নিন্দার পাত্র হয়ে ওঠে। সবাই তার দোষের কাহিনি বলে বেড়ায়, কিন্তু কেউ ভাবে না তাকে ভালো করার উপায় কী হতে পারে। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি, পরিবার, কর্মক্ষেত্র বা সমাজ—সব জায়গায় এই নেতিবাচক প্রবণতাই বেশি দেখা যায়।

এই শিক্ষাটি আমাদের শেখায় করুণা, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতার গুরুত্ব। সারদা মা এখানে মানুষকে উৎসাহ দেন, তারা যেন কেবল সমালোচক না হয়ে গঠনকারী হয়। একজন ভুল করলে তাকে পথ দেখানোই প্রকৃত বন্ধুত্ব, প্রকৃত মানুষত্ব। এটি একটি চিরন্তন মূল্যবোধ, যা আমাদের জীবন ও সমাজের কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে পারে।

বর্তমান যুগে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া আর খবরের কাগজে সবসময় নেতিবাচক আলোচনা বেশি দেখা যায়, সেখানে সারদা মা-র এই বাণী আমাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা কেবল নিজের অভিমত দিয়ে কাউকে আঘাত না করে, কীভাবে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়, তা ভাবতে শিখি। গঠনমূলক সমালোচনা এবং ভালোবাসার সহায়তায় একজন মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।

এই উক্তি শুধুমাত্র একজন আধ্যাত্মিক মায়ের মুখনিঃসৃত বাণী নয়, বরং একজন মহিয়সী নারীর সমাজ দর্শন, মানবতা এবং সহমর্মিতার জাগরণ। আমাদের উচিত এই দর্শন নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করা। কারণ সমাজে পরিবর্তন আনতে চাইলে কেবল সমস্যা দেখিয়ে নয়, সমাধানের পথ দেখিয়েই তা সম্ভব।

আজকের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে নেতৃত্ব, সম্পর্ক, পরিবার—সব ক্ষেত্রেই যদি আমরা “ভাঙার” বদলে “গড়ার” মনোভাব গ্রহণ করি, তাহলে এই পৃথিবী অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে। আমরা যদি শুধু ভুল না ধরে, বরং ভুল থেকে শিখতে এবং শেখাতে পারি, তাহলেই সারদা মা-র এই বাণী সার্থক হয়। তাই নিন্দা নয়, গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলাই সারদা মা-র এই বাণীর মূল বার্তা।


  • সারদা মা-র উক্তি বিশ্লেষণ

  • ভাঙা ও গড়ার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি

  • সমালোচনার বদলে সহানুভূতি

  • বাংলা আধ্যাত্মিক শিক্ষা

  • নিন্দা ও সমালোচনার মানসিকতা

  • গঠনমূলক চিন্তা

  • সারদা মা-র শিক্ষা

  • মানবতা ও সমাজের মূল্যবোধ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"যদি শান্তি চাও, মা, কারো দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার ক'রে নিতে শেখ, কেউ পর নয়, মা; জগৎ তোমার।"

When a man sees defects in others, his own mind first gets polluted. What does he gain by finding faults in others? He only hurts himself by that

Ordinary human love results in misery. Love for God brings blessedness