"যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়"
সারদা মা বলেছিলেন, "যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।"
এই বাণী শুনলে মনে হয় যেন সরল একটি উপমা।
কিন্তু গভীরে তা এক অমূল্য সত্য।
ফুলকে যত স্পর্শ করা হয়, সে ততই সুবাস ছড়ায়।
চন্দন যত ঘষা হয়, ততই সে তার মৌলিক গন্ধ প্রকাশ করে।
তেমনি, ভগবানের নাম, লীলা ও দর্শন নিয়ে যত আলোচনা করা যায়, ততই আত্মজ্ঞান প্রস্ফুটিত হয়।
শুধু চুপ করে বসে থাকলে বা ঈশ্বরের কথা না ভাবলে, জ্ঞান আসবে না।
বাড়ি বসে ঈশ্বর উপলব্ধি অসম্ভব— তার জন্য চাই সাধনা ও চর্চা।
এই চর্চা তত্ত্ব নিয়ে হোক, প্রশ্ন নিয়ে হোক, অথবা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে।
যখন একজন আরেকজনকে ঈশ্বর নিয়ে কিছু বলে, তখন নিজেকেও বুঝিয়ে বলে।
এই বলার মধ্য দিয়েই ভাবের গভীরতা বাড়ে।
ভগবানের নাম করলে শুধু মুখ নয়, মনও পবিত্র হয়।
সারদা মা আমাদের বুঝিয়েছেন— শুধু বিশ্বাস নয়, চর্চাও প্রয়োজন।
যেমন চাষ না করলে ধান হবে না, তেমনি আলোচনা না করলে তত্ত্বের বিকাশ হয় না।
ভক্তির পাশাপাশি জ্ঞানচর্চা জীবনের জন্য জরুরি।
সেই জ্ঞান শুধুই বই পড়ে পাওয়া যায় না, তা কথোপকথনে প্রস্ফুটিত হয়।
যখন কেউ ঈশ্বরকে নিয়ে আলোচনা করে, তখন তার চেতনায় আলো ফুটে ওঠে।
এই আলো প্রথমে নিজেকে আলোকিত করে, পরে অন্যকেও।
সারদা মা এরূপই শিখিয়েছেন – সহজ উপমায় গূঢ় সত্য।
তিনি জানতেন, মানুষ সরল ভাষা বুঝতে পারে।
তাই তিনি ফুল, চন্দনের মতো দৈনন্দিন জিনিস দিয়ে জ্ঞান বোঝান।
এই বাণী শুধু শ্রুতিমাত্র নয়— প্রয়োগযোগ্য।
আজকের যুগে, যখন মানুষ ঈশ্বরের নাম ভুলে যাচ্ছে, তখন এই চর্চা আরও প্রয়োজনীয়।
কথায় কথায় তর্ক না করে, আলোচনা করাই শ্রেয়।
যত আলোচনা, তত ভাবনাচিন্তার প্রসার।
এই ভাবনাই মানুষকে ঈশ্বরের দিকে টানে।
তত্ত্বশাস্ত্র মানে কেবল বই নয়— জীবনের প্রতিফলন।
ভগবানকে বোঝা যায় তাঁর নাম, তাঁর গুণ, ও তাঁর দর্শন নিয়ে ভাবলেই।
তেমনি করে, আমাদের চিন্তা গভীর হয়।
সারদা মা এইরকম চিন্তার মধ্যেই আধ্যাত্মিকতা খুঁজে পান।
তিনি কখনো আড়ম্বর পছন্দ করতেন না, বরং সরলতা পছন্দ করতেন।
তাঁর এই বাণীতে সরলতা আর গাম্ভীর্য মিলেমিশে একাকার।
ভগবানের নাম নেওয়া, শোনা, ও বলা – এই তিনেই রয়েছে চেতনার উত্তরণ।
যেখানে ঈশ্বরের কথা হয়, সেখানে আশীর্বাদ ও আলোক আসে।
এই আলো ব্যক্তিগত নয়— সার্বজনীন।
তেমনি করে আমাদের পরিবার, সমাজ ও মন শুদ্ধ হয়।
এই আলো আমাদের অসৎ থেকে সৎ পথে টেনে আনে।
এভাবে চর্চা করতে করতে একসময় আত্মোপলব্ধি হয়।
তখন আর বাইরের ঈশ্বর খুঁজতে হয় না— অন্তরেই তাঁর দেখা মেলে।
সারদা মা চিরকালই আত্মজ্ঞান ও ঈশ্বরভক্তির মিলনরেখা রচনা করেছেন।
তাঁর এই বাণী আমাদের পথপ্রদর্শক।
আমরা যদি এই নির্দেশ মেনে চলি, তবে জীবনের দিশা পাব।
প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ ঈশ্বরচর্চা করলে মন শান্ত হয়।
সেই চর্চা হোক নিজের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে, বা গুরুর সঙ্গে।
যেখানেই হোক, সে আলো একদিন সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়বে।
সারদা মায়ের বাণী আমাদের শেখায়— ভগবান আলোচনা করতে করতেই ধরা দেন।
তাঁর কথা যেন শ্রবণেই শেষ না হয়, হৃদয়ে গিয়ে বাসা বাঁধে।
এই ভাবেই হয় তত্ত্বজ্ঞানের উদয়।
-
সারদা মা তত্ত্বজ্ঞানের বাণী
-
সারদা মায়ের উপমা
-
Sarada Devi quotes in Bengali
-
Sri Sarada Devi on knowledge
-
Sarada Maa Bhagavat tattva
-
Spiritual discussion quotes Bengali
-
ঈশ্বর ভাবনা আলোচনা বাণী
-
ভগবতচিন্তা করতে করতে জ্ঞান
-
চন্দন ঘষে গন্ধ উপমা সারদা মা
-
Sarada Ma flower sandalwood metaphor
-
Ramakrishna Sarada Devi teachings
-
Self realization through satsang
-
Satsang importance quotes in Bengali
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন