যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।
"যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।" –
সারদা মা-র জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক গভীর মাতৃস্নেহ ও সহানুভূতির প্রতিফলন। তাঁর মুখে উচ্চারিত এই বাক্য—
"যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।" — মানবতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক বার্তা হয়ে থাকবে।
এই উক্তির মাধ্যমে সারদা মা তাঁর সর্বজনীন মাতৃত্ববোধের নিখুঁত পরিচয় দিয়েছেন। এখানে তিনি কেবল ভক্ত-অনুসারীদের উদ্দেশ্য করে বলেননি, বরং সব মানুষকে নিজের সন্তানরূপে গ্রহণ করেছেন। 'যারা এসেছে' — অর্থাৎ যারা তখন তাঁর শরণে এসেছিল; 'যারা আসেনি' — অর্থাৎ যারা এখনো তাঁর শরণে আসেনি বা তাকে জানে না; আর 'যারা আসবে' — ভবিষ্যতের সেই অনাগত ভক্ত বা মানুষ, যাদের জন্যও তাঁর ভালোবাসা অপরিসীম। এই তিনটি শ্রেণির মানুষকে একত্রে আশীর্বাদ দেওয়ার মধ্যে রয়েছে সার্বজনীন প্রেম ও মমতার এক অদ্বিতীয় শিক্ষা।
এটি কেবল একটি আধ্যাত্মিক বক্তব্য নয়, বরং এক বিশ্বজনীন মানবিক দর্শন। সারদা মা বোঝাতে চেয়েছেন যে ঈশ্বর বা মায়ের কৃপা কেবল নির্দিষ্ট কারো জন্য সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর আশীর্বাদ এমন এক শক্তি, যা সময়, স্থান ও পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সকলের উপর সমানভাবে বর্ষিত হয়। এই ধরনের শিক্ষাই আজকের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন — যেখানে বিভাজন, বিচ্ছিন্নতা ও দলাদলি বেড়ে চলেছে।
এই বাণীর মধ্যে যে মাতৃত্ব লুকিয়ে আছে, তা নিঃসন্দেহে মানবসভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আদর্শ। সারদা মা সবাইকে সন্তান বলে গ্রহণ করেছেন — তা সে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, বিশ্বাস, জাতীয়তা বা সময় যাই হোক না কেন। এই শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃত ভালবাসা কখনো শর্তসাপেক্ষ নয়। এটি এমন এক আশীর্বাদ, যা আমাদের সত্ত্বাকেই পরিবর্তন করতে পারে।
যখন আমরা হতাশায় ভুগি, একাকীত্বে ডুবে যাই, কিংবা নিজেকে ভুলে ফেলি — তখন এই বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একজন মা রয়েছেন, যাঁর ভালবাসা চিরন্তন, যাঁর আশীর্বাদ কখনো শুকায় না। সারদা মা-র এই ঘোষণা যেন এক বিশ্বজনীন আলিঙ্গনের ডাক — "তুমি আমার সন্তান, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
এই ধরনের ভাবধারা আমাদের পারিবারিক জীবন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধ্যাত্মিক চেতনার মূলে পৌঁছে যায়। এই বাণী একজন বিশ্বাসী বা ভক্তকে যেমন আনন্দ দেয়, তেমনই একজন সাধারণ মানুষকেও অনুপ্রেরণা জোগায়। এমনকি যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না, তাদের কাছেও এটি নিছক এক ভালোবাসার বাণী — যা নিঃস্বার্থ, নিরন্তর এবং চিরকালীন।
সারদা মা-র এই বক্তব্য বর্তমান বিশ্বের জন্য এক যুগান্তকারী বার্তা। যেখানে মানুষ বিভাজনের রাজনীতিতে ব্যস্ত, ধর্মীয় বিদ্বেষে ক্ষতবিক্ষত, সেখানে এমন একটি বাণী একতার শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে। এটি আমাদের শেখায়, অন্তরের মায়া ও ভালবাসা দিয়ে আমরা সমাজকে বদলাতে পারি।
সারদা মা কেবল একজন আধ্যাত্মিক গুরু নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত দেবী-মাতা, যাঁর অন্তর থেকে নিঃসৃত এই বাণী যুগে যুগে মানুষের হৃদয়কে উষ্ণতা দেবে। তাই আমাদের উচিত এই বার্তাকে শুধু শ্রবণ না করে, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। আমাদের আশেপাশের মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, সহানুভূতি ও আশীর্বাদ দেওয়া — এটাই সারদা মা-র শিক্ষা।
-
সারদা মা-র উক্তি বাংলা
-
মাতৃত্ব ও মানবতা
-
সর্বজনীন আশীর্বাদ
-
সারদা মা-র শিক্ষা
-
বাংলা আধ্যাত্মিক বাণী
-
মায়ের ভালোবাসা
-
মাতৃস্নেহের ব্যাখ্যা
-
সার্বজনীন মানবিকতা
-
সারদা মা ও মানবজাতি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন